আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ হলফনামায় কৃষি ও ব্যবসাকে পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ২১ লাখ ২৫ হাজার ৮১ টাকা।
এর আগে ২০১৩ সালে তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়ে ছিলেন ২১ লাখ ৭৭ হাজার ৪১০ টাকা। খুলনা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে চলতি বছরের ২৮ নভেম্বর ও ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর জমা দেয়া পৃথক দু’টি হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৫ বছরে নারায়ন চন্দ্র চন্দের বার্ষিক আয় কমেছে। তবে ব্যবসা থেকে আয় বেড়েছে। কমেছে পারিতোষিক ভাতা। ২০১৩ সালে ব্যবসা ও মৎস্য থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়ে ছিলেন ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এবার ব্যবসা ও মৎস্য থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর ২০১৩ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে পারিতোষিক ভাতা উল্লেখ করেছিলেন ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৪১০ টাকা।
এবার মন্ত্রী হওয়ার পর প্রতি বছর পারিতোষিক ভাতা পাচ্ছেন ১১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ২০১৩ সালে তিনি তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখিয়ে ছিলেন, কিন্তু এবার তা উল্লেখ করেননি।
এছাড়া বর্তমানে জমা দেয়া হলফনামায় তার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ২৬১ টাকার। এছাড়া দুইটি পুরাতন জীপ গাড়ি, একটি মোটরসাইকেল ও আসবাবপত্র আছে যার মূল্য উল্লেখ করেনি তিনি। তাঁর কাছে নগদ টাকা রয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা আছে ৫৭ লাখ ৮৮ হাজার ২৬১ টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আছে ৬০ হাজার টাকার । এছাড়া তার স্ত্রীর নগদ টাকা আছে ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যাংকে স্ত্রীর জমা আছে ১১ লাখ টাকা।
২০১৩ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুযায়ী ছিল, ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ। এর মধ্যে তার কাছে টাকা ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর ছিল ৭ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রী ও তাঁর নির্ভরশীলদের নামে কোনো টাকা জমা ছিল না। তবে পোস্টাল, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমনতে বিনিয়োগ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯১২ টাকা। এছাড়া ২০১৩ সালে তাঁর স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র ছিল ৭ লাখ টাকার। এবার (২০১৮) স্ত্রীর সঞ্চয়পত্র আছে ১০ লাখ টাকা।
এদিকে গত পাঁচ বছর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর ও নির্ভরশীলদের নামে কোনো অর্থ জমা না থাকলেও বর্তমানে সেখানে প্রায় ৭০ লাখ টাকা আছে।
এছাড়া ২০১৩ সালে নিজের ৫ ভরি এবং স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ থাকার কথা তিনি উল্লেখ করেছিলেন। এবার শুধু স্ত্রীর ১৫ ভরি স্বর্ণ আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
২০১৩ সালে দেয়া হলফনামায় কোনো দায়-দেনা ছিল না বলে উল্লেখ করেছিলেন। এবার ব্যাংক ঋণ ও ব্যক্তিগত ধার মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ টাকা দেনায় রয়েছেন তিনি। হলফনামায় মন্ত্রী ব্যাংক ঋণ দেখিয়েছেন ৮৩ লাখ ৯৮ হাজার ৯৫৮ টাকা। পাশাপাশি ৩৫ লাখ টাকা ব্যক্তিগত ধার আছে বলে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া মন্ত্রীর কৃষি জমি আছে ৪ দশমিক ১৭ একর। তাঁর স্ত্রীর নামে আছে ২ দশমিক ৭০ একর। অকৃষি জমি আছে দশমিক ৬৫ একর। ৪০ লাখ টাকা মূল্যের একটি দালান আছে তাঁর। ২০১৩ সালের হলফনামাতেও একই তথ্য উল্লেখ করেছিলেন।
অপরদিকে ২৩ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি পেশা হিসেবে হলফনামায় ‘রাখি মাল’ ব্যবসা দেখিয়েছেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এম কম (একাউন্টিং)। তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৯১ হাজার ৩৬৯ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক মুনাফা থেকে ১ হাজার ৩৬৯ আয় তার। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে ২৩টি মামলা রয়েছে।
পূর্বের তিনটি মামলায় খালাস পেয়েছেন তিনি। এছাড়া ৫ লাখ ২৪ হাজার ১ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে তার। এর মধ্যে নগদ ৪৪ হাজার ৮৭৫ টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ ৬০ হাজার ১২৬ টাকা, ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে তার। তার স্ত্রীর ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩২ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে তার রাজউকে ২০ লাখ ৭২ হাজার টাকার প্লট রয়েছে। এছাড়া পিতার সম্পত্তিতে পরিবারের যৌথভাবে নির্মিত ইমারতে বসবাসরত অংশের মূল্য ২ লাখ টাকা। তার কোন দায় নেই।
বিএনপি নেতা গাজী আব্দুল হক তার হলফনামায় পেশা চিকিৎসক (অবসর) দেখিয়েছেন। তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন এম ফিল। তার বার্ষিক আয় ৭ লাখ ৫১ হাজার ৩৩৬ টাকা। এর মধ্যে কৃষিখাত থেকে ১ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও পেনশন থেকে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৩৬ টাকা আয় তার। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৪০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ২ লাখ টাকার ইলেকট্র্রনিক্স সামগ্রী ও ৩০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ২০ বিঘা ধানী জমি। আর সাড়ে ৭ কাঠা জমিতে বাড়ি। যার মূল্য ৭৫ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন তিনি। স্ত্রীর ৫ বিঘা ধানী জমি। এছাড়া তার যৌথ মালিকানায় ৮ কাঠা জমির উপর বাড়ি, যার মধ্যে তিনভাগের এক ভাগ তার।
বিএনপি’র অপর নেতা ড. মামুন রহমান পেশা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন চার্টার্ড একাউনটেন্ট। তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রয়েছে। আয় ও স্থাবর সম্পদের ঘর ফাঁকা রেখেছেন তিনি। তবে ৭৬ লাখ ২০ হাজার ৭৮৬ টাকা মূল্যের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে তার। এর মধ্যে নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ২৬ হাজার ৬৪৫ টাকা ও বন্ড, সেভিংস, শেয়ার রয়েছে ৬৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৮ টাকার। এছাড়া হলফনামায় তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ উল্লেখ করেননি তিনি। এছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন-ইসলামী আন্দোলনের শেখ মুজিবুর রহমান, কমিউনিস্ট পার্টির চিত্ত রঞ্জন গোলদার ও জাতীয় পার্টির মো. শহীদ আলম।